ভ্রুম ভ্রুম : ম্যাচ ইঞ্জিন
ম্যাচ ইঞ্জিন, হ্যাট্রিকের ম্যাচ গুলোর যাবতিয় ঘটন অঘটন নিয়ন্ত্রন করে এই বাছাধন। ম্যাচের ফলাফলও নির্ধারনও হয় ম্যাচ ইঞ্জিন থেকেই। আর তাই হ্যাট্রিক খেলার সবচেয়ে বেশি আলোচিত/সমালোচিত চরিত্র তিনি। দুর্ভাগা কোন পরাজয়ের পরে প্রথমেই সব রাগ গিয়ে পরে বাছাধনের উপর আর মনে হয় কেন এই প্রাগৈতিহাসিক ইঞ্জিনের কোন পরিবর্তন/পরিবর্ধন হচ্ছে না। কিন্তু আপনি কি জানেন ম্যাচ ইঞ্জিন আসলে কিভাবে কাজ করে? আজ চেষ্টা করব ম্যাচ ইঞ্জিন সম্পর্কে এখন পর্যন্ত যা জানা আছে তা বলার। ম্যাচ ইঞ্জিন সম্পর্কে যদি জেনে না থাকেন তবে আজ আপনি বুঝতে পারবেন কেন এত ভাল রেটিং নিয়েও আপনি একটা ম্যাচ হেরে গিয়েছিলেন।
শুরুর কথা
প্রথমেই বলে নেই ম্যাচ ইঞ্জিনটা আসলে কি। এটা হল হ্যাট্রিক প্রোগ্রামের একটা কোড বিশেষ যেটা কিনা একটা ম্যাচ যা ঘটে তা নির্ধারণ করে। ঘটনাগুলোর প্রেক্ষিতে ম্যাচের ফলাফল হয়। একটা ম্যাচ এ যা ঘটে তার পুরোটাই নির্ধারিত হয় বিভিন্ন রেটিং এর ঊপর। আর রেটিং নির্ভর করে খেলোয়াড়ের দক্ষতা/বিশেষত্ব, আর খেলার কৌশলের উপর। রেটিং এর উপর নির্ভর করে ম্যাচের যেকোন একটা ঘটনা যেকোন একটা দলের পক্ষে বা বিপক্ষে যায়।
জিনিসটা প্রোবাবিলিটি দিয়ে বুঝাই। লাল দল আর নীল দলের খেলা হচ্ছে। একটা কৌটায় লাল বল আর নীল বল রেখে দেয়া হল। এখন সেখান থেকে যদি একটা বল চোখ বন্ধ করে তুলে যদি লাল হয় তাহলে লাল দল গোল দেওয়ার সুযোগ পাবে আর নীল হলে নীল দল সু্যোগটা পাবে। এখন যার রেটিং যত বেশি, কৌটায় তার রংগের বলও বেশি।
এখন বলে নেই যা বলছি সবই আসলে অভিজ্ঞতা থেকে বলা। হ্যাট্রিকের এর হেল্প সেকশনে অনেক কিছুই বলে দেওয়া আছে, আবার অনেক কিছুই আমরা জেনেছি বিভিন্ন গবেষনা থেকে। ম্যাচ ইঞ্জিনের সবটুকু এখনোও কারও জানা নয়। যতটুকু আমাদের জানা আছে তাই এখানে লিখছি।
ম্যাচ ইঞ্জিনের গঠন
প্রতিটি ম্যাচ মুল ১৫ টি চক্র থাকে। এই ১৫ টি চক্র পুরো ৯০ মিনিটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। কখন কোনটা ঘটবে সেটা পুর্বনির্ধারিত নয়। তাই অনেক সময়ই একমিনিটে তিনটি গোল হয়ে যায় আর দীর্ঘ সময়ে কিছুই হয় না। প্রতিটি চক্রে আবার ৬ টি ভাগ থাকতে পারে।
ক) বিশেষ ঘটনা
খ) সাধারন সুযোগ
গ) কাউন্টার এটাক; যদি গোলের সুযোগ ফস্কায়
ঘ) লাল/হলুদ কার্ড
ঙ) আঘাতপ্রাপ্তি
চ) দলগত বিভ্রান্তি
শুধু প্রথম তিনটি থেকে শুধু গোল হওয়া সম্ভব।
বিশেষ ঘটনা
হ্যাট্রিক ম্যানুয়ালে (চেপ্টার ১৩) বিশেষ ঘটনাগুলোর ব্যাপারে বেশ ভালভাবে বর্নণা দেওয়া আছে। এখানে তাই প্রত্যেক্টা বিশেষ ঘটনা সম্পর্কে একটু একটু করে বলছি।
এই ঘটনাগুলো আবার দুই ভাগে বিভক্ত। আবহাওয়া নির্ভর (রোদ/বৃষ্টি) এবং গোলের সুযোগ। আবহাওয়া নির্ভর ঘটনাগুলো খেলোয়ারের দক্ষতাকে প্রভাবিত করে। তাই পরোক্ষভাবে তা পুরো দলের রেটিংকে প্রভাবিত করে। আর বিশেষ গোলের সুযোগগুলোর তৈরী হয় এক বা দুইজন খেলোয়ারের বিশেষত্বের উপর। এই বিশেষ গোলের সুযোগগুলোর একটা ব্যাপার হল যদি সুযোগ ফস্কায় তাহলে সেটা থেকে কাউন্টার এটাক হতে পারে না। একটা দলের বল দখল যত বেশি থাকে, তাদের এই ধরনের বিশেষ গোলের সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনাও তত বেশি থাকে। অবশ্যই খেলোয়ারদের বিশেষত্ব থাকা লাগবে আগে।
সাধারন সুযোগ
সাধারন সুযোগই একটা ম্যাচ এ সবচেয়ে বেশি। দুর থেকে শট অথবা ফ্রি কিক ছাড়া কোন একক প্লেয়ারের দক্ষতার উপর সু্যোগ থেকে গোল হবে কি হবে না তা নির্ভর করে না। বরঞ্চ পুরো দলের রেটিং ই নির্ধারন করে দেয় গোলের ভাগ্য।
এই সাধারন সুযোগ গুলো আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়। প্রতি দল পাঁচটি করে মোট দশটি সুযোগ পায়। আর পাঁচটি সুযোগ বল দখলের অনুপাতে বন্টন হয়। অনুপাতে বন্টন হয় না বলে বলা উচিত যে দলের বল দখল যত বেশি সেই দলের এই সুযোগগুলো পাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। এই জন্য প্রতি ম্যাচ এ সর্বনিম্ন পাঁচটি থেকে সর্বচ্চো ১৫ টি গোলের সুযোগ তৈরী হতে পারে। তবে এর সবসময় সবগুলো সুযোগের কথা ম্যাচের বর্ননায় আসে না।
পাঁচটি সুযোগ যা বল দখলের প্রেক্ষিতে বন্টন হয় নিচের সমীকরন অনুযায়ী,
লাল দলের সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা = লাল দলের মাঝমাঠ/ ( লাল দলের মাঝ মাঠ + নীল দলের মাঝ মাঠ)
মাঝমাঠের মান নির্ধারণ করা হয় Hatstats(*) থেকে।
উদাহরন স্বরুপ কারও যদি সলিড লো (hatstat 26) আর প্রতিপক্ষের পাসেবল ভেরি লো (hatstat 21) মাঝমাঠ হয় তাহলে সুযোগ জেতার সম্ভাবনা হবে ৬৫%।
সুযোগ জেতার পর ম্যাচ ইঞ্জিন নির্ধারন করে সুযোগটা কি ধরনের হবে,
- ডান বা বাম পাশ দিয়ে ( সম্ভাবনা ২৫% + ২৫% = ৫০%)
- মাঝ দিয়ে (৩৫%)
- ইন্ডাইরেক্ট ফ্রি কিক (৫%)
- ডাইরেক্ট ফ্রি কিক (বা পেনাল্টি) (১০%)
এই সুযোগগুলো লং শটে রুপান্তর হতে পারে যদি কেঊ তাদের ম্যাচের কৌশল হিসেবে লং শট ব্যবহার করে (দুর্লভ ক্ষেত্রে কৌশল ব্যবহার করা ছাড়াই এটা হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে এটা বিশেষ সুযোগের অন্তর্ভুক্ত ধরা হবে)। আবার AIM/AOW কৌশলের কারনে পাশ থেকে মাঝে অতবা মাঝ থেকে পাশে যেতে পারে।
এরপর নির্ধারন হয় সুযোগ থেকে গোল হবে কিনা। এই জন্য যেই দল সুযোগটা পায় যেখানে পায় সেখানকার আক্রমন ভাগের মানের সাথে অপর দলের রক্ষনাত্মক ভাগের মান তুলনা করা হয়। সাম্প্রতিক এক গবেষনায় ফলাফল থেকে ধারনা করা হয় গোলের সম্ভাবনা নিচের সমীকরনের মত করে হিসেব করা হয়,
গোলের সম্ভাবনা = ০.৭৪*(আক্রমনাত্বক মান)^৩/ (০.৭৪*(আক্রমনাত্বক মান)^৩ + (রক্ষনাত্বক মান)^৩)
এর মানে হল আক্রমন আর রক্ষনভাগ যদি সমানে সমান হয় তাহলে গোল হওয়ার সম্ভাবনা ৪২.৫%।
ফ্রি কিক আর লং শটের ক্ষেত্রে কিন্তু হিসাব ভিন্ন। এই ক্ষেত্রে পুরো দলের পরিবর্তে যে কিকটা নিবে তার দক্ষতা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আর রক্ষনাত্বক দলের জন্য তাদের গোলরক্ষকের দক্ষতা হিসেবে আসে। এখন পর্যন্ত এই ক্ষেত্রে হিসেবটা কিভাবে তা বের করা যায়নি, কিন্তু গোলরক্ষকের গোলকিপিং আর সেট পিস আরে শট যে নিচ্ছে তার সেটপিস ব্যবহৃত হয়। লং শটের ক্ষেত্রে অ্যাটাকও হিসেবে আসে।
কাউন্টার অ্যাটাক
যদি কোন গোল মিস হয়, সেখান থেকে প্রতিপক্ষ কাউন্টার অ্যাটাকের সুযোগ পেতে পারে। এটা সাধারনত যখন একটা দল কাউন্টার অ্যাটাক কৌশল নিয়ে খেলে তখন হয়। কিন্তু দুর্লভ ক্ষেত্রে কৌশল ব্যবহার ছাড়াই হতে পারে। কাউন্টার অ্যাটাক থেকে গোলের সুযোগ সাধারণ গোলের মতই হিসেব হয় (কাউন্টার অ্যাটাক থেকে শুধু পেনাল্টি সুযোগ তৈরী হতে পারে না)
খেলার কৌশল
দুই দলের খেলার কৌশল গোলের সুযোগকে বিভিন্ন ভাবে প্রভাবিত করে। এই সম্পর্কে হ্যাট্রিক ম্যানুয়ালের ১৪ চেপ্টার বিস্তারিত আলোচনা করা আছে। এখানে তাই সংক্ষেপে কিছু বলছি,
- প্রেসিং : এর মাধ্যমে কিছু সুযোগ বিনষ্ট করা যায়। এটা নিজের এবং প্রতিপক্ষের দুই ধরনের সুযোগই নষ্ট করে।
- মাঝ/পাশ দিয়ে আক্রমন : পাশের বা মাঝের সুযোগ মাঝের বা পাশের সুযোগে রুপান্তর হবে। (যখন দলের তুলনামুলক মাঝের বা পাশের তুলনামূলক শক্তি বেশি হয় তখন ব্যবহার করা যায়)
- লং শট : সাধারন সুযোগ লং শটে রুপান্তর হয়।
- ক্রিয়েটিভলি খেলা : বিশেষ ধরনের গোলের সুযোগের সংখ্যা বাড়বে (আবহাওয়া সম্পর্কিত ঘটনাগুলো বৃদ্ধি পাবে)। এটা নিজের এবং প্রতিপক্ষ উভয়কেই সমানভাবে প্রভাবিত করে।
- কাউন্টার অ্যাটাক : প্রতিপক্ষ কোন সুযোগ থেকে গোল করতে না পারলে সেটা নিজের দলের জন্য আক্রমনাত্বক সুযোগে রুপান্তরিত হতে পারে। এটা অবশ্য শুধু তখনই কাজ করবে যদি নিজের দলের মাঝমাঠের শক্তি প্রতিপক্ষের মাঝ মাঠ থেকে দুর্বল হয় (এই কৌশল ব্যবহারে মাঝ মাঠের শক্তি ৭% হ্রাস পায়, কিন্তু কৌশল কাজ করার হিসেবটা হয় এই হ্রাস হিসেব করার আগে)
প্রতিটি কৌশল ব্যবহারে কিছু খারাপ দিকও আছে। এই জন্য কৌশল ব্যবহারের আগে বেশ ভেবে চিন্তে নেওয়া উচিত।
কার্ড, আঘাত, বিভ্রান্তি
প্রথম তিন ধরনের ঘটনার পর একটা খেলোয়াড়ের কার্ড পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে (তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে)। অথবা আঘাত পেতে পারে (নিজে থেকে কিংবা কোন ফাউল থেকে)। এছাড়া দলগত বিভ্রান্তি তৈরী হতে পারে। দলগত বিভ্রান্তি তৈরী হয় যদি কম ব্যবহৃত কোন ফরমেশন ব্যবহার করা হয়। এছাড়া প্রতিযোগিতা থেকে বাদ পরে যাওয়ার মত কোন খেলা হলে খেলার শেষের দিকে এমন বিভ্রান্তি তৈরী হতে পারে।
বেশি আত্ববিশ্বাস এবং রক্ষনাত্বক মনোভাব
এতক্ষন যা বললাম তার বাইর আরও দুই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। যখন লিগে প্রতিপক্ষের আর নিজের দলের স্থানের মাঝে অনেক ফারাক থাকে তখন দল বেশি আত্ববিশ্বাসী হয় উঠতে পারে। (ম্যানুয়ালের চেপ্টার ১৬ তে এই বিষয়ে বিস্তারিত বলা আছে)। এই ক্ষেত্রে মাঝ মাঠের শক্তি কিছু কমে যায়। যদি মধ্যবিরতির সময় দল হেরে যেতে থাকে তাহলে এর প্রভাব কেটে যায়।
দলের খেলায় রক্ষনাত্বক মনোভাব চলে আসতে পারে যদি দুই বা তার চেয়ে বেশি গোল ব্যবধান তৈরী হয়। এটা ঘটার সম্ভাবনা ২ গোলের ব্যবধানে ২০%, ৩ গোলের ক্ষেত্রে ৪০% এভাবে ৬ গোলের ব্যবধানে ১০০%। একবার রক্ষনাত্মক মনোভাব চলে আসলে তা আর পরে পরিবর্তিত হয় না। এই ক্ষেত্রে অ্যাটাক ২০% কমে যায় আর রক্ষনভাগের শক্তি ১৫% বাড়ে।
ক্লান্তি আর রেটিং পরিবর্তন
এটা খেয়াল রাখা উচিত যে বিভিন্ন ভাগের রেটিং পুরো খেলা জুড়ে পরিবর্তিত হতে থাকে। এটা মুলত হয়ে থাকে খেলোয়াড়রা সময়ের সাথে সাথে ক্লান্ত হতে থাকে এই জন্য। কে কেমন ক্লান্ত হবে তা নির্ভর করে কার স্টেমিনা কেমন তার উপর। এই জন্য রিপোর্টের শেষে যেই রেটিং লেখা থাকে তার চেয়ে পুরো ম্যাচে কিভাবে রেটিং পরিবর্তিত হয় তা জানা বেশি জরূরী।
শেষ কথা
এখন পর্যন্ত হ্যাট্রিকের খেলা সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য সাম্প্রতিক সব সুত্র থেকে যা জানা গেছে তার উপর নির্ভর করে এই লেখাটি লেখা। বিভিন্ন প্রেডিক্টর (Fantamondi, HTEV, the Preniubbo) এই একিই তথ্য ব্যবহার করে খেলার সম্ভাব্য ফলাফল হিসেব করে। সব শেষে এতটুকুই বলব যে, এটা সবসময় চিন্তা করা উচিত, যদি একটা খেলায় জয় ৮০%, ড্র ১০% আর পরাজয়ের সম্ভাবনা ১০% থাকে, তাহলে এরকম প্রতি দশটা খেলার একটা হারাটা খুব স্বাভাবিক। বরঞ্চ ১০ টার ১০ টাই জিতে যাওয়াটা বেশি অবাক করা ব্যাপার।
(*) Hatstat মান হিসেব করার জন্য সর্বনিম্ন স্তর কে ১ ধরে প্রতি উপস্তরে ১ করে যোগ করে যেতে হবে (অথবা প্রতি স্তরে ৪ যোগ করে নিতে হবে)। তার মানে ডিসাস্ট্রাস লো মানে ২ আর ডিসাস্ট্রাস হাই মানে ৩।
(**) মুল ইংরেজী লেখা পাওয়া যাবে এখানে (18016)
2014-10-01 11:43:50,
2471 views
Link directly to this article (HT-ML, for the forum):
[ArticleID=18217]